ইসলামিক গল্প থেকে শিক্ষা | Islamic story 2021

(ইসলামিক গল্প থেকে শিক্ষা)বৃষ্টির মতো আগুনের গোলা পড়ছে আকাশ থেকে। নীল আকাশ ধারণ করেছে রক্তবর্ণ। প্রাণপণে ছুটছে সবাই। ( Islamic story 2021) জীবন বাঁচানো ছাড়া এই মুহুর্তে দ্বিতীয় কিছু ভাবার সুযোগ নেই। চারদিকে হট্টগোল। যে যার মত ছুটছে। বাতাস ভরে গেছে বিষাক্ত গ্যাসে। সেই  বিষাক্ত বাতাসে যুক্ত হয়েছে শরীর পোড়া তীব্র গন্ধ।

ক্যাপ্টেন লিয়ানের ঠিক সামনেই একটা আগুনের ফুলকি এসে পড়লো। তার উচিত লাফিয়ে সেখান থেকে সড়ে পড়া। অথচ সে অনড়। চুল পরিমাণ নড়ার ক্ষমতাটুকুও অবশিষ্ট নেই যেন। কারণ ইতিমধ্যেই তার একটা পা আগুনে ঝলছে গেছে।

ইসলামিক গল্প থেকে শিক্ষা

ইসলামিক গল্প থেকে শিক্ষা | Islamic story 2021


কিছুটা সময় নিল লিয়ান। চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল একবার। সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সবাই নিজের জীবন নিয়ে পালাচ্ছে। এই মুহুর্তে অন্য কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। উপয়ান্তর না দেখে দগ্ধ পা'টাই টেনে নিয়ে চলল সে। খোড়াতে খোড়াতে এগিয়ে যেতে লাগলো উদ্দেশ্যহীন। এই মুহুর্তে ঠিক কোন দিকে যেতে হবে তার জানা নেই। কোন গুহার সন্ধান পেলে আশ্রয় নিতে হবে। গুহায় ঢুকে পড়া ছাড়া এই বিপদ  থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই।

কিছু দূরেই ছোট-খাট একটা জটলা দেখা গেল। সম্ভবত একটা গর্ত খুঁজে পেয়েছে ওরা। সবাই হুড়মুড় করে গর্তে ঢুকে পড়ছে। শেষ মুহুর্তে কিছুটা আশার  আলো দেখতে পেল লিয়ান। দগ্ধ পা'টা টেনে টেনে খুব কষ্টে এগিয়ে চলতে শুরু করল। গুহায় ঢোকার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত জীবন অনিশ্চিত। যে কোন মুহুর্তেই আগুনের চাকতি এসে পড়তে পারে শরীরে। যার অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু।

গুহার অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে লিয়ান। তাকে লাইনে দাঁড়াতে হলো। চরম বিপদের মাঝেও সবাই নিয়ম মেনেই গুহায় আশ্রয় নিচ্ছে। এটা তাদের ঐতিহ্য। শৃঙ্খলাই যে জীবনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার তা এই গোত্রটি বেশ ভালো করেই জানে।

আর মাত্র সাত জন।  এর পরই লিয়ান মাটির অতলে গা লুকাতে পারবে। তিন সেকেন্ডের মতো অপেক্ষা করতে হবে তাকে। এই সময়টুকু বেঁচে থাকতে পারলেই সে আরও কিছু দিন পৃথিবীর মাটির ঘ্রাণ নিতে পারবে।

লিয়ানের সামনে যখন মাত্র দুই জন আছে ঠিক তখনই আগুনের গোলাটা এসে পড়লো। ভিড় লক্ষ্য করেই গোলাটা ফেলা হয়েছে। সুদক্ষ হাতে ভিড়ের ঠিক মাঝামাঝি ফেলা হয়েছে সেটি। আগুনের ফুলকির সাথে আলো-ঝলমলে হয়ে উঠলো চারদিক। আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিলো একসাথে অনেকগুলো প্রাণ। লিয়ান ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো। তার একটা পা আগেই পুড়ে গেছে। এবারে ঝলসে গেল পিঠের দিকটা। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে। ধুলোর কারণে পিঠের আগুন নিভে গেলেও সুতীব্র যন্ত্রণায় সে কুঁকড়ে উঠলো। একটা অস্পষ্ট আর্তনাদ করা ছাড়া তার কিছুই করাই নেই। চোখের সামনের দৃশ্যগুলো ক্রমেই ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো। লিয়ান শেষ বারের মতো নিজের পৃথিবীটা দেখে নিল। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলেও সে যে মারা যাচ্ছে এতটুকু বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে না।

চোখের সামনের দৃশ্যগুলো পুরোপুরি ঝাপসা হওয়ার আগেই লিয়ানের মনে হলো কেউ তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত হাতে ধুলো ছিটিয়ে লিয়ানের পিঠের যন্ত্রণা কমানোর চেষ্টা করছে সে। লিয়ান সবটুকু চেষ্টা করল শরীরটা ঘুরিয়ে নিতে। পারল না। এক সময় আবিস্কার করল পেছন থেকে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সে। লিয়ানের দিকে ঝুকে এলো কিছুটা। ঘোলা দৃষ্টিতেই লিয়ান তাকে চিনতে পারল। মেরিনা। বড় প্রিয় মুখ তার।

মেরিনার খোঁজেই আজ বের হয়েছিলো লিয়ান। আগুনের গোলা বর্ষণ শুরু হয় ঠিক একাদশ প্রহরে। তখন সবেমাত্র লিয়ান ঘরে ফিরেছে। সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করল মেরিনা ঘরে নেই। দিকশূন্য হয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলো সে। মেরিনাকে খুঁজতে গিয়ে চোখের সামনে অসংখ্য  প্রিয়জনের মৃত্যু দেখতে হয়েছে। দেখতে হয়েছে পোড়া শরীর নিয়ে বাঁচার শেষ আকুতি টুকু। সবাইকেই সে সাবধান করেছিলো অবশ্য। তারা কেউ তার কথা শুনেনি। কারণ সবাই তাদের নিজ নিজ প্রিয়জনকে সাথে করেই ফিরতে চেয়েছিল। ফিরতে পারেনি কেউই। প্রিয়জনদের সাথে তাদের প্রাণটাও গিয়েছে কেবল।

‘তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না। তুমি গুহায় ঢুকে পড়ো। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।’ খুব কষ্টে কথাগুলো উচ্চারণ করলো লিয়ান। 

‘আমাকে খুঁজতে এসেই তোমার এই অবস্থা। তোমার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। অথচ তোমাকে এই অবস্থায় রেখে গুহায় ফিরে যেতে বলছো আমাকে।’  নিজের মুখটা লিয়ানের মুখের সাথে লাগিয়ে কান্না মাখা কন্ঠে বলল মেরিনা।

‘আমার জীবনের আলো ফুরিয়ে এসেছে। আমার জন্য তুমি কেন নিজের জীবটাও খরচ করবে! তুমি ফিরে যাও।’

‘আমি যাব না। তোমাকে এভাবে, এই অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারছি না আমি।’

‘তুমি অবশ্যই ফিরে যাবে। আমাদের ভালোবাসা রক্ষার্থেই তোমাকে ফিরে যেতে হবে। আমি চাই -আমার স্মৃতি নিয়ে তুমি বেঁচে থাকো আরও কিছুদিন। তোমার কল্পনাতেই নাহয় বেঁচে থাকবো আমি।’যন্ত্রণায় জর্জরিত শরীর নিয়েও মুখে হাসি নিয়ে এলো লিয়ান।  মেরিনা কিছু বলল না। লিয়ান বুঝতে পারল তাকে একা রেখে সে যাবে না। শেষ চেষ্টা করল লিয়ান, ‘মেরিনা, তুমি গুহায় ফিরে যাও। তোমাদের ক্যাপ্টেন তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছে। নিয়ম ভাঙার অধিকার নেই তোমার।’

স্থীর চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মেরিনা উঠে দাঁড়ালো। এক পা দু'পা করে এগিয়ে যেতে লাগলো গুহার দিকে। মধ্যদুপুরের সূর্যটা তখন হাসিমুখে তাপ ছড়াচ্ছে। লালটে আলোয় মেরিনাকে শেষ বারের মতো দেখে নিল লিয়ান। ঐ তো ধীরে ধীরে মেরিনার শরীরটা ছোট হয়ে আসছে। দূরে সরে যাচ্ছে সে। দূরত্ব বাড়ছে দুজনের মধ্যে। যেই দূরত্ব কোন দিন কমবে না আর।

হঠাৎ মেরিনা দাঁড়িয়ে পড়লো। লিয়ান বিস্ময় নিয়ে দেখতে পেল মেরিনা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাগলের মতো ছুটে আসছে তার দিকেই। ধুলোমাখা মুখটা খুব দ্রুতই তার মুখের সামনে চলে এলো পুনরায়।

মেরিনা কাপা কাপা গলায় বলল, ‘আমি পারব না লিয়ান। তোমার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই যে শ্রেয়। তুমি আমাকে আর ফিরে যেতে অনুরোধ করো না।’

লিয়ান কিছু বলল না। অপলক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর ক্লান্ত কন্ঠে বলল, ‘এই যুদ্ধ শেষ হবে কখন মেরিনা? শেষ হবে কি আদৌ?’

মেরিনার জবাব দিতে সময় লাগলো। দীর্ঘ সময় নীরব থেকে সে বলল, ‘যুদ্ধ বলছো কেন? যুদ্ধ হয় দুই পক্ষের ভেতর। এক পক্ষ খেয়াল খুশিমতো আমাদের পুড়িয়ে মারছে। এটাকে নিশ্চয়ই যুদ্ধ বলা যায় না।’

‘আমরা কি কিছুই করতে পারবো না ওদের বিরুদ্ধে?  কোন দিনই না?’

‘নাহ আমরা কিছুই করতে পারবো না লিয়ান। আমাদের কেবল আশার প্রহর 

গুনতে হবে যে কখন তারা……’

মেরিনা কথা শেষ করতে পারল না। তাদের ঠিক উপরেই উঠে এসেছে তীব্র এক আলোর উৎস। সেখান থেকে আগুনের আভা আসছে। মনে হচ্ছে এবার ওদের দুজনকেই লক্ষ্য বানিয়েছে ওরা। মেরিনা লিয়ানের দিকে খানিকটা সড়ে এলো। পাশাপাশি দুজন ফ্যাকাসে মুখে তাকিয়ে রইলো উপরে ভাসা আগুনের গোলার দিকে। ঐ তো, মুহুর্ত বাদেই আগুনের গোলাটা ওদের উপর এসে পড়বে।  ওরা সেই মুহুর্তটার অপেক্ষায়। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা।

Islamic story 2021

#পরিশিষ্টঃ গলিত কলমের আগুন দিয়ে পিপড়া পুড়িয়ে মারা আমার প্রিয় খেলার মধ্যে একটি। ফুটন্ত প্লাস্টিক যখন পিপড়ার গায়ে পড়ে তখন ছেত ছেত শব্দ হয়। পৈশাচিক একটা আনন্দ পাই আমি। আজকের পিপড়াগুলা বড় হারামি। দুই-এক ফোটা যেই না ফেলেছি ওমনি সব দৌড়ে গর্তে ঢোকা শুরু করেছে। এই দৃশ্যটাও অবশ্য বেশ রোমাঞ্চকর। একদল ক্ষুদে প্রাণী মৃত্যু ভয়ে ছুটছে দেখতে খুব একটা খারাপ লাগে না!

এর মাঝে হঠাৎ একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ল। দুইটা পিপড়া গর্তে ঢোকার  চেষ্টা করছে না। একটার শরীরে সম্ভবত আগুনের আঁচ লেগেছে। কিন্তু অন্য পিপড়াটা সুস্থ। সেও গর্তের দিকে যাচ্ছে না। সম্ভবত দলের একজনকে রেখে সে একা যাবে না।

আমার সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হলো না। দুটোকে এক সাথেই পোড়াতে হবে। কলম তাক করলাম ঠিক ঐ দুটোর উপর।

‘তুই আবারও পিপড়া মারতাছোস।’ আব্বার প্রচন্ড চড়ে আমার হাত কেঁপে উঠলো। কলম ছিটকে গিয়ে পড়লো দূরে। 

ঐ দুটো পিপড়াকে মারতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই উঠতে হলো আমাকে। বিরক্ত মুখে টিভির সামনে গিয়ে বসলাম। ইসরাইল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধের সংবাদ দেখাচ্ছে তখন। ইসরাইলের সৈন্যরা নির্বিচারে মানুষ মারছে। ছোট-ছোট শিশুর বুকে এঁকে দিচ্ছে বুলেটে আঁকা ছবি। দেখে আমার বুকটা কেপে উঠলো। বিষন্নতায় ছেয়ে গেল মন। আল্লাহর সৃষ্টি সেরা জীব, মানুষ এত খারাপ হয় কিভাবে! (সমাপ্ত

Post a Comment

0 Comments