Short Love Story | প্রথম দেখাতেই ভালোবাসা

(Short Love Story)মারিয়া চলে যাওয়ার সময় তার আঁচলটা দিয়ে আমার মুখের ঘাম মুছে দিচ্ছিলো। (প্রথম দেখাতেই ভালোবাসা) ঘামে সিক্ত মুখমণ্ডলটি মারিয়ার হাতের স্পর্শ  পেয়ে একটু কেঁপে উঠলো।মনে হয় সেই কাপুনিটি আমার মুখের নয়;কাপুনিটি ছিলো মারিয়ার হাতের।

short love story

Short Love Story  প্রথম দেখাতেই ভালোবাসা


মারিয়ার সাথে আমার পরিচয় বছর দুয়েক আগে।সেই দিনটির কথা আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে।মনে না থাকার কোনো কারন তো খুঁজে পাচ্ছি না।মারিয়ার সাথে মিশে থাকা আমার সব স্মৃতিগুলো আমার সামনে এখনও ঝলমল করে।

মারিয়ার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় কলেজ ক্যাম্পাসে।নতুন কলেজ;সবকিছুই নতুন।সেই নতুন দিনে নতুন মানুষের সাথে আমার পরিচয়। 

'এই যে ভাইয়া,শুনছেন'? পেছন থেকে ভীত কন্ঠস্বরে মারিয়া আমাকে ডাকলো

আমিও সেই ডাকে সাড়া দিলাম।সাড়া দেওয়া মাত্রই মারিয়া তার নিজের ভিতর থেকে ভয় দূর করে কিছুটা প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়লো।কেন প্রশান্তি পেলো তার উত্তর আমার নিকট আজও অজানা।

সেদিন মারিয়ার সাথে সাক্ষাতের বিষয়বস্তু ছিলো ভর্তি ফরম ফিল আপ নিয়ে।কিন্তু মারিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক শুধু ভর্তি ফরম ফিল আপ তেই সীমাবদ্ধ থাকে নি।সময়ের ব্যবধান আর নিয়তি,মারিয়াকে আমার জীবনসঙ্গিনী রূপে ফিল আপ করে দিবে তেমনই একটা আভাস দিয়েছিলো।

love at first sight

কলেজে একটু আদটু দেখা সাক্ষাৎ,চুপিচুপি ইশারায় কিছু কথা আর সর্বশেষ ভালোলাগা-ভালোবাসার কথাটিও একসময় প্রকাশ করা হয়।যদিও মারিয়াকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটি আমিই প্রথম করেছিলাম,কিন্তু অন্তরে ভালোবাসার রক্ত ক্ষরণ দু'জনের একই সময়ে ঘটেছিলো।দু'জন দু'জনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তার উজ্জ্বল সাক্ষী। 

মারিয়ার সাথে পরিচয়ের বছর দুয়েক পরে পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।দুটি পরিবারকে এক করতে আমার আর মারিয়ার যে কষ্ট হয়েছে তা বোধ হয় আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ ছিলো।সেই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন।

 মাত্র ২ দিন পর আমার আর মারিয়ার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।আমি আর মারিয়া সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমাদের দু'জনের বিয়ের কেনাকাটা একসাথে করবো।প্রথমে পরিবারের কেউ ই রাজি হয় নি।কিন্তু এটা যে প্রেমের বিয়ে;তাই পরবর্তীতে কেউ আর আমাদের প্রস্তাবটি নাকোচ করতে পারেন নি।

love at first sight

বিকাল বেলা আমি আর মারিয়া শপিংয়ের উদ্দেশ্যে মির্জাপুর রোড থেকে রিক্সায় উঠি।দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়;তবু মারিয়ার শপিং শেষ হয় না।মেয়েদের এই একটা জিনিস বোধ হয় সব পুরুষেরই বিরক্ত লাগে।(Short Love Story)আর তা  হলো 'পছন্দ'।আমার মতামত হলো, বিয়ের জন্য সবাই যেমন ভাবে কেনাকাটা করে আমরাও সেভাবে করবো।কিন্তু মারিয়ার মতামত ভিন্ন।মারিয়া বলছে,আমাদের বিয়েটা হবে স্পেশাল।আর কেনাকাটাও হবে একটু ইউনিক টাইপের।

সত্যি বলতে সব মেয়েদের বিয়ে নিয়ে একটা বড় সড় স্বপ্ন থাকে;একটা মনের মানুষ,একটা মনের মতো সংসার।কিন্তু আমার মনে হয় মারিয়ার স্বপ্নটা একটু বেশিই বড় সড়।যাহোক,আমার মারিয়ার এই কেনাকাটার ভাবসাব দেখে বাহিরে বাহিরে কিছুটা বিরক্তবোধ হলেও ভেতরে কোনো রাগ,অভিমান নাই।

Touch

শপিংয়ের জিনিসপত্রগুলো বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমরা ফুটপাতের পাশে একটি টং দোকানে বসলাম।টং দোকানে বসার আবদারটা মারিয়া নিজে থেকে করেছিলো।

তার নাকি ইচ্ছে ছিলো হবু বরকে নিয়ে টং দোকানে একসাথে বসে এক কাপে চা খাবে।মারিয়ার এই অদ্ভুত ইচ্ছাটি দেখে আমি হতভম্ব না হয়ে পারলাম না।তবু প্রেমিক হিসেবে প্রেমিকার এই পাগলামি মানতে আমি বাধ্য হলাম।(Short Love Story)টং দোকানের মামা চা তৈরি করার জন্য কেটলিতে পানি চুলায় বসিয়েছিলো।আর অন্যদিকে আমি মারিয়ার শরীরে একটুখানি লেপ্টে বসেছিলাম এবং মারিয়ার গুনগুনানি উপভোগ করছিলাম।

কিন্তু সে উপভোগের স্থায়িত্বকাল যে খুব বেশি নয়,তা আমি ভাবতেও পারি নি।

চোখের পলকে আমাদের সব স্বপ্ন নিমিষেই ধুয়েমুছে যায়। গলির রাস্তা দিয়ে ফুল স্পীডে রাইড করা একটি মোটর বাইক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে ঠিক মারিয়ার কাঁধ বরাবর এসে ধাক্কা দেয়।সেই ধাক্কাতে মারিয়া দুমড়ে পড়ে চায়ের কেটলির উপর।আর আমি ছিটকিয়ে পড়ি টং দোকানের ভিতরে।

best romance novels

কয়েক সেকেন্ডের ভিতর টং দোকানের আশে পাশে কয়েকশ লোকজনের জমজমাট একটা হৈ হুল্লোড় তৈরি হয়ে যায়।

আমি নিজেকে সামলে নিতেই লক্ষ্য করি মারিয়ার মাথা থেকে লাল রক্ত তার ফর্সা চামড়ার উপর গড়িয়ে পড়ছে।আগুনের উত্তাপে ঝলসে গেছে মাথার কিছু অংশ।আর মোটর বাইকটি লেপ্টে আছে মারিয়ার শরীরের উপর।মারিয়া তখন অচেতন অবস্থাতে পড়ে আছে।খানিক দূরে উপুুড় হয়ে আছে মোটর বাইকটির চালকের লাশ।লোকটির মাথার করোটিকাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।আর মারিয়াকে নিয়ে আমি ছুটছি হসপিটালে।

যখন হসপিটালে নামলাম তখন মারিয়ার জ্ঞান ফিরেছিলো।আর ঐ সময় মারিয়া চোখ খুলে আমাকে দেখতে পায়।আমার কপালে ঘাম দেখে সে চেষ্টা করে তার আঁচল দিয়ে মুছে দিতে।কিন্তু কাঁপা কাঁপা হাতে মারিয়া ব্যর্থ হয় সেই ঘাম মুছতে।এই কাঁপা কাঁপা হাতের স্পর্শ ছিলো মারিয়ার থেকে পাওয়া আমার শেষ স্পর্শ। 

romantic love story

জ্ঞান ফেরার কিছুক্ষণ পরই মারিয়া আমাকে এবং আমাদের সকলকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যায়।মারিয়ার এই চলে যাওয়াটা আমি সহজে মেনে নিতে পারিনি।বহুত দিন যাবৎ প্রেমিকার অনন্তকালের এই লুকোচুরি খেলা আমি মনকে বুঝাতে পারি নি

মারিয়া চলে যাওয়ার পর টং দোকানে আবার সেই আগের মতো কেটলিতে পানি গরম হয়।অন্য কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা এক কাপে একসঙ্গে চা খাওয়ার স্বপ্ন বুনে যায়।আর আমি মারিয়ার অপেক্ষায় বসে থাকি।মারিয়া আর আমার বিয়ের শপিংগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি।(Short Love Story | প্রথম দেখাতেই ভালোবাসা) তাকিয়ে থাকি টং দোকানের সেই গরম পানি থেকে উড়ে যাওয়া উষ্ণ বাস্পের দিকে।যার দিকে তাকাতে চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে ওঠে।কিন্তু মনের ভিতর স্মৃতিগুলো রঙিণ হয়ে ভেসে বেড়ায়।মারিয়ার শেষ স্পর্শের স্থানে শিরশিরে ভাব চলে আসে।আবার চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে যায়।শুধু স্পর্শটা অমলিন রয়ে যায়।

Post a Comment

0 Comments